এখন থেকে নিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হবে। আমার রোজকার যাপনের দিনলিপি। যা জঙ্গল মহলের ভিতরের গভীর গহীনে আরেক জঙ্গল মহলের মুখোমুখি হয়ে তার রোজকার যাপনের ছবি ইতিপূর্বে কেউ সেভাবে লেখেন নি।
পড়ুন জঙ্গলমহলের কলমচি'র কলমে
আজ প্রথম পর্ব।
লেখা পড়ুন। মতামত দিন।
মামা থাকলে মামাঘর
অমিত মাহাত
লোককবি ভবতোষ সৎপথীর শিরি চুনারাম মাহাত কখন আমার ভিতর ঘরে সুগুম মার্যে ঘাপচি গাড়ে বসেছে মালুম নাই। কুসমি'রা ছাড়ে যায়। বাপ হতে পারলি নাই। মামা বনলি।
সে অনেকদিনকার কথা। তা থাক।
মাঝে মাঝে পৈসায় টান পড়ে। তখন খুখড়া বিকি। নাই তো গাছের কলা কাঁধি। চুনার চালচুলহা তো ছিলই নাই। খুখড়া বাঁধা দড়িও ছিল নাই। সে নাই থাক। হা ভাল, বললি বটে। আমারও তো নাই ।তবে আছে টা কী? গাছতল? গাছতল না হলেও একটা ডুমৈর তল ছিলই। মানে মামাঘর।
আর ই নিয়েই একটা দাঁতকথা। কে পহিলে বলেছিল নাই জানি। তো কথা হল, মামাঘর অ যা আর ডুমৈর তল অও তা। ক্যানে ডুমৈর তল! একদিন গরু খুঁজা খুঁজলি। বাঁশবাগান লে গরামথানের ফুটৈল আগপাতিয়া ধানবিল তক্কো। মুরমুদের পিঁদাড় লে মান্ডিদের বাখুল তক্কো। বাগাল ঘর থাকতে ধাই বুড়ির ডেহর তক্কো। মেনতুক অড় আর মিলল কই। মিলবেক ক্যানে?
উ ধারে যে মৈতার বিটির তখন কুলহি বুলা। আর উয়ার টিহিক টিপিক বিল্লি চাইল দেখে যা ভাবনায় ছিল। সে সব হাপিস পুরা। টুকু বাদে টের পালি, উধারে মৈতার বিটি নাই। হাওয়া। ভাগৈল বা।
আর ঠিক তখনেই একটা বিল্লি আমার আগুতল দিয়ে রাস্তা ডেঁহগিল।
আমি বিল্লিকে শুধালি - অ গে কুথাকে যাইস?
-অই অদের ঘর।
-তো ডহর বাদ দিয়ে পিঁদাড়ে পাঁদাড়ে ক্যানে?
-সাধে! কুত্তার ডরে।
-তোর চাঁদি ডর কিসকে! তুই যে বাঘের মাসী।
-সে তো লাপিতের গল্প।
-না না। বোকা তাঁতি। তাঁতির গল্প।
গল্প যা হোক। লাপিত চালাক। তাঁতি বোকা। আর দেশেও এখন দুটা লোক। একটা চালাক। আর জন বোকা। চালাকে চালায়। বোকায় আফিম খায়। আর আফিম জিনিষটা নেতাদের পেঁদলা ভাষন।
এখন ধান্ধাও যা। চুরিও তা। বিল্লি আমাকে জ্ঞান দিয়ে পাশের ঘরের মাছটি উল্টে খেতে রওনা দিল।
২
এতক্ষণ কত কি ভাবলি। কোথা থেকে কোথায় গেলি। হুঁশ হতে বুঝলি। বেশিদুর কই গেলি আর। এই তো সেই ডুমৈর তলেই আছি। আজও মামাঘরের ডাইল ভাত। কিন্তু কোথায় কী। সেই শাগ ভাত। মামী জানাল - আজ তো ডাইলের জনম দিন ভাইগ্না। ডাইল খাতে নাই।
- আচ্ছা তবে নাই খাব।
-না ভাইগ্না। খাইয়ে লাও। ভাইগ্না হামদ্যের কত ভালো ছানা বঠে। উয়ার মামা যা ভালো নাই।
মামা বাড়িধারে, মানে শাগ বাড়িএ ছিল। মামীর মুখে এমন পতি নিন্দা সহ্য হবার লয়।
উধারে শাগ বাড়ির ভিতর থাক্যে মামা চেঁচায়ে বল্ল - ফেইর! কান ভারি!
হয়তো , এই জন্যই হয় তো কথা টি চালু হয়েছে
"মামাঘরে ভাইগ্নার ভাত
সে পঠি নাই রে বঅ! "
ঘুরেফিরে সেই ডুমৈর তলেই হফছিলি। ই গাছতলেই বিধুমুখী রোদন গাহেছিল। গাছে উঠায় তলে কাঁটা দিয়ে দিয়েছিল। আর বিজয় কাকা তো কোনদিনেই ঝুমুর গাহে দিয়েছেন - গাছে উঠায় দিবেক লকে নামহায় দিবেক নাই, অ ভাই পরের কথায় গাছে চঘিস না!
থাকার লে না থাকা ভালো। আর না থাকার লে কানা মামা ভালো।
মামা থাকলে তবেই না মামাঘর।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন